শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভরসা কোন ফর্মুলা?

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভরসা কোন ফর্মুলা?

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নারকীয় নিধনের পৈশাচিক ও রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হামলার দুই বছর পার হলো। এখনো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান কোনো সাফল্য নেই বিশ^সম্প্রদায়ের হাতে। নির্দোষ ও নিরস্ত্র রোহিঙ্গা জাতির ওপরে ইতিহাসের বর্বরতম হামলা করেও মিয়ানমার প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরাপদ ও সম্মানজনক কোনো সমাধানের পথে হাঁটছে না। কিন্তু কেউই মিয়ানমারকে নমনীয়ও করতে পারেনি। জীবনের শঙ্কা এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তাই বাংলাদেশে নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গাই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে শর্তবিহীন ফিরে যেতে রাজি নয়। আর বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করতে করতে ক্লান্ত। বিশ্বসম্প্রদায়ের সব দরবারে ধরনা দিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত ‘বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি’ রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে বিশাল সমস্যার মধ্যে।

রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিকভাবে ‘আরাকানি ভারতীয়’ বলা হয়। তারা শত শত বছর ধরে পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আদি বাসিন্দা। ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আছে কিছুসংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বীও। ২০১৩ সালে জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের আন্দোলনের অধিকার, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির অধিকার হরণ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং নির্মূল তাণ্ডবের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলকরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সেখানে গণহত্যার মতো অপরাধের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এ ছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং উগ্র বৌদ্ধদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িঘর।

বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদরাসা। রাখাইনের আদিবাসী রোহিঙ্গাদের কোনো স্মৃতিচিহ্নই অবশিষ্ট রাখেনি মিয়ানমার সরকার ও সংখ্যাগুরু মগরা।

জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ভেতরে উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের দ্বারা ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার শিকার। একই সাথে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং জোর করে শ্রমদানে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে সে দেশের সরকার। জাতিসঙ্ঘের মতানুসারে, রোহিঙ্গাদের ওপর চলা এ নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের কথিত হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মীসহ বেশ কিছু লোক নিহত হওয়ার অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারশেন’ শুরু করে। তবে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি মিয়ানমার। হামলার কোনো প্রামাণ্য ছবি, স্থান বা হামলায় নিহতের নাম-ঠিকানা পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি মিয়ানমার। হামলা চালানোর অজুহাত তৈরি করতেই সম্পূর্ণ বানোয়াট অপবাদ দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’-এ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত, অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা আহত, নির্যাতন ও অগণিত রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রায় শতভাগ বাড়িঘর।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে ‘অপারেশন ক্লিয়ারেন্স’ নামে যে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর, তা বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্য হামলার নিকৃষ্ট উদাহরণ। পরদিন সকাল থেকেই কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবান জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার উনচিপ্রাং, থাইংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার শাহপরী দ্বীপ দিয়ে রোহিঙ্গার ঢল নামে বাংলাদেশে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যে যেভাবে পেরেছে। যারা মাতৃভূমি ছাড়তে চায়নি, তারা পালিয়ে ছিল মিয়ানমারের পাহাড়-জঙ্গলে। কিন্তু অবস্থার আরো অবনতি হলে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই ধারণা করতে পারেনি পৈশাচিক হামলার ভয়াবহতা। স্বজনহারা, শোকাতুর ও আহত রোহিঙ্গাদের ছিল না থাকার ব্যবস্থা, খাবার ও ওষুধ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হৃদয়বানেরা দুই হাত খুলে যে সহায়তা দিয়েছে তাই ছিল রোহিঙ্গাদের ভরসা।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিজ হাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ তুলে দিতে কক্সবাজার ছুটে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেপ্টেম্বরের ১৪ ও ২১ তারিখ উখিয়া ও টেকনাফে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। আহত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্য ক্যাম্প। এ সময় বিরাট সমাবেশে এরশাদ দাবি করেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তা বিধানে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষী পাঠাতে হবে। নাগরিকত্বের পূর্ণ মর্যাদায় তার নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার। দাবি করেছিলেন রোহিঙ্গা শিশুদের সব অধিকার সুরক্ষিত করার। এরপরও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এরশাদই রাখাইনে শান্তিরক্ষী প্রেরণের দাবি তুলেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি এবং ত্রাণ বিতরণের সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত করতে বাংলাদেশ সরকারকে তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন এরশাদের দাবি ও পরামর্শ সব মহলেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকার দ্রুত সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি এবং ত্রাণ বিতরণের সার্বিক দায়িত্ব দেয়। রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট এলাকায় ৩২টি ক্যাম্পে ব্লক অনুযায়ী ঘর তুলে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে। এতে হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তা, খাদ্য ও আবাসনের নিশ্চয়তা মেলে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাস্তবসম্মত এবং সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি দীর্ঘ দুই বছরেও। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বরের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল। এর আলোকে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়; যার তিনটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা আশাহত হয়েছি কারণ, আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রথম থেকেই আমরা মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার এবং অবিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ গুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ০১. অবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা। ০২. অবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা। ০৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে ‘সুরক্ষা বলয়’ গড়ে তোলা। ০৪. রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। ০৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন।

২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাশাপাশি তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উদ্যোগহীনতা আমাকে ভীষণভাবে হতাশ করেছে; যদিও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমাদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির অগ্রগতি অতি ধীর বলেই মনে হচ্ছে।’ চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডির রাখাইন পরিদর্শনের পরিকল্পনা ছিল। তা মিয়ানমার সরকার বাতিল করে দিয়েছে।

২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দফতরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বৈঠকে যোগ দেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইতিবাচক ভূমিকার প্রত্যাশা করেন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ হলেও বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা সচল ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মিয়ানমার, ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার ১০৩৭টি রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। সেই তালিকা থেকে তিন হাজার ৫৪০ শরণার্থীকে মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করতে রাজিও হয়েছিল। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। টেকনাফের ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পের শরণার্থীদের পরিবহনে বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সাক্ষাৎকার দিতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। অনেক রোহিঙ্গাই ঘরে তালা ঝুলিয়ে চলে যায় অন্য ক্যাম্পে। মুখ থুবড়ে পড়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া।

তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা দিলো মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের অধিকার এবং সব সঙ্ঘাত বন্ধ করে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাড়িঘরে ফিরে যেতে এবং ব্যক্তিগত সব সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। একই ক্যাম্পের মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ২০১৭ সালের লোমহর্ষক হামলার বিচার করতে হবে। এসব দাবি পূরণ হলেই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। তারা বলেন, মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। ‘শর্তহীনভাবে’ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া মানেই আবারো মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। এটা কোনো রোহিঙ্গাই চাইবে না।

শতভাগ রোহিঙ্গাই মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করছে না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ, বিজিপি এবং নাইন সিক্স নাইন সঙ্ঘের বৌদ্ধ যুবকদের নৃশংস হত্যা, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগ ভুলতে পারেনি রোহিঙ্গারা। তারা মনে করেন, জাতিসঙ্ঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এড়াতেই শর্তহীন প্রত্যাবাসনের নামে প্রতারণা শুরু করছে। আর এ কারণেই ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্টের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ামাফিক, মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় এরশাদের দেয়া ফর্মুলা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পারে। সেজন্য জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে শান্তিরক্ষীদের পাঠাতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কর্ম, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার দিতে হবে তাদের। বিচার করতে হবে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে গণহত্যা, গণধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের বিচারের। আর এ জন্য অবশ্যই ভারত ও চীনসহ বিশ^সম্প্রদায়কে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

লেখক : রোহিঙ্গাদের নির্যাতন নিয়ে লেখা ‘রক্তাক্ত রাখাইন’ বইয়ের লেখক। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877